ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো শিরোপা নেই, যার স্বাদ পাননি লিওনেল মেসি। অর্জনের ঝুলিতে তার রেকর্ড ভুরিভুরি, আরও কত কীর্তি! এত এত সাফল্যের মাঝেও বছর খানেক আগে তার বড় এক অপূর্ণতা ছিল, জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে না পারা। গত বছর কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্যে দিয়ে মিটে গেছে তাও। এবার সবচেয়ে বড় সাফল্যে শেষটা রাঙানোর পালা।
বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার পালা। সেই অভিযানে আগামী রোববার ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামবেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা।
চলতি বিশ্বকাপে মেসি এরই মধ্যে অনেকগুলো রেকর্ড গড়েছেন। এক সেমিফাইনালেই গড়েছেন একসঙ্গে চারটি রেকর্ড। ফাইনালেও ভাঙতে পারেন আরও একাধিক রেকর্ড। চলতি আসরে সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুটের দৌড়ে আছেন। যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বি আরেক ফাইনালিস্ট কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই দুজনের মধ্যে কে সোনালি জুতো পান সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
তবে একটি রেকর্ড মেসি গড়বেন মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে। সবচেয়ে বেশি ২৫টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলে আপাতত জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথিউসের সঙ্গে শীর্ষে আছেন। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে নামলেই বিশ্বমঞ্চে তার ২৬তম ম্যাচ হবে। অর্থাৎ এই রেকর্ডটি তখন একার করে নেবেন মেসি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড এরই মধ্যে গড়ে ফেলেছেন তিনি। ১৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে পেছনে ফেলেছেন মেক্সিকোর রাফায়েল মার্কুইজ (১৭) ও আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাকে (১৬)। রোববার মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপের ১৯তম ম্যাচ খেলবেন তিনি।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) আর ২৪ মিনিট খেললে মেসি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় খেলার রেকর্ড ভাঙবেন। পাঁচ বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে ২১৯৪ মিনিট খেলেছেন মেসি। সবার উপরে আছেন ইতালিয়ান কিংবদন্তি পাওলো মালদিনি, তিনি খেলেছেন ২২১৭ মিনিট।
আর মেসি যদি ফাইনাল জিতে যান, ট্রফির সঙ্গে আরেকটি রেকর্ডে ভাগ বসাবেন মেসি। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা (১৭)। ১৬টি ম্যাচ জিতে তার পেছনে আছেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী।
চলতি আরেকটি বিরল রেকর্ডের সামনে রয়েছেন মেসি। যেটি কিনা বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে কখনো হয়নি। আগামীকালের ফাইনালে যদি মেসি একটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করতে পারেন এবং আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে একসঙ্গে বিশ্বকাপের মঞ্চে ট্রেবল জয়ের রেকর্ড গড়বেন তিনি। সে জন্য অবশ্য প্রথমে কামনা করতে হবে এমবাপ্পে যেন কোনও গোল না করে এবং গ্রিজম্যান যেন কোনও অ্যাসিস্ট না করেন। সর্বোপরি আর্জেন্টিনা যেন শিরোপা জিতে।
আর্জেন্টিনা যদি শিরোপা নাও পায় মেসি যদি গোল ও অ্যাসিস্ট করেন। অন্যদিকে এমবাপ্পে কোনও গোল আর গ্রিজম্যান কোনও অ্যাসিস্ট না করলে গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল পাবেন মেসি। এ রেকর্ডটি এর আগে করার সুযোগ পেয়েছিলে ১৯৮৬ সালে দিয়াগো ম্যারাডোনা। আর ২০১০ সালে জার্মানির থমাস মুলার। তবে বিশ্বকাপ শিরোপা না জিতলে গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল মেসির কাছে একটি সাধারণ শিরোপাই হিসেবে গণ্য হবে। যেটি মেসি কখনো চাইবেন না।
মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার:
> আন্তর্জাতিক ম্যাচ: ১৭১
> আন্তর্জাতিক গোল: ৯৬
> বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ৫ বার (২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮, ২০২২)
> বিশ্বকাপে ম্যাচ: ২৫টি (জার্মানির লোথার মাথেউসে সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড)
> বিশ্বকাপে গোল: ১১টি (আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ)
বিশ্বকাপের ফাইনাল: ২ বার (২০১৪ ও ২০২২)
২০২২ বিশ্বকাপে গোল: ৫টি
> ২০২২ বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট: ৩টি (একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট করার কীর্তি)
> ২০২২ বিশ্বকাপে ম্যান অব দা ম্যাচ খেতাব: ৪ বার (সব মিলিয়ে ১০ বার, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ)
> বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৯৪ মিনিট খেলেছেন মেসি। তার চেয়ে বেশি খেলেছেন কেবল ইতালি সাবেক তারকা ডিফেন্ডার পাওলো মালদিনি (২ হাজার ২১৭ মিনিট)।
> অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড মেসির (১৮)।
> বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ও সবশেষ গোলের মধ্যে ব্যবধান:১৬ বছর
> বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে অ্যাসিস্ট: ৬টি